Wednesday 23 March 2016

রঙখেলা

সিগারেটটা ধরিয়েই হাসি পেল সিদ্ধার্থর।শ্রীতমা কত চেষ্টাইনা করেছিল সিগারেটটা ছাড়ানোর।কত রাগ করতো,ফোন তুলতোনা,চুমু খেতে গিয়ে সিদ্ধার্থ থাপ্পড় কম খেয়েছে!বাব্বাহ!!অথচ,ব্রেক আপের এতদিন পরে এসেও সিগারেট ধরালে সিদ্ধার্থর বারবার ওর কথাই মনে পড়ে।
অনেক পাল্টে গিয়েছে সিদ্ধার্থ।অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।তাও মাঝে মাঝেই পুরোনোদিন গুলো ভিড় করে এসে ওলট-পালট করে দিয়ে যায় ওকে।
না।আজ ওর ময়দানের সেই বিকেলগুলোর কথা মনে পড়ছেনা,কাল সন্ধ্যেয় হবু বরের সাথে শ্রীতমা শপিংয়ের যে ছবিগুলো এফবি-তে দিয়েছে আশ্চর্যরকমভাবে সেগুলোর কথাও মনে করতে ইচ্ছে করছেনা ওর।
আজ মনে পড়ছে ইউনিভারসিটির সেই দিনটা।দোলের আগে শেষক্লাস ছিল সেদিন।ইউনিভারসিটি পৌছে সিদ্ধার্থ শুনেছিল ক্লাস হবেনা।ক্লাসের দিকে যেতে গিয়ে দেখেছিল লনে সবাই আবীর খেলছে।একটু খুঁজতেই শ্রীতমাকে পেয়ে গেছিল ও।ততক্ষণে ওর সাদা কুর্তি আর সাদা ছিলনা।ওর সারা মুখের মত,ওটাতেও ছিল বাহারী আবীরের রঙ।
সৃজা,অত্রিদের ভিড়ে গিয়ে শ্রীতমাকে "একটু শোননা।দরকার আছে।" বলে ও নিয়ে গেছিল একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে।রুমাল দিয়ে ওর মুখটা মুছে দিয়ে ব্যাগ থেকে আবীর বের করে বলেছিল "তোর জন্যে যে আমি আবীর এনেছি শ্রী,মাখবিনা?" জবাবে সিদ্ধার্থকে জড়িয়ে ধরেছিল শ্রীতমা।সেই বন্ধ ক্লাসটায় ওরা দুজন দুজনকে ভালবেসে আবীর মাখিয়েছিল অনেকক্ষণ ধরে।ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সিদ্ধার্থ বলেছিল "আমায় সারাজীবন এভাবে তোকে সাজাতে দিবিতো,শ্রী?" শ্রীতমা হেসে বলেছিল "অন্য কাউকে সাজাতে গিয়ে দেখ না কি করি তোর!"
তারপর হাতে হাত দিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়েছিল ওরা।
সিদ্ধার্থ জানে আজ শ্রীতমা অন্যকারও,সিদ্ধার্থ আজও ভোলেনি এই শ্রীতমাই তিনমাস সময় নিয়েছিল ব্রেক-আপের পর নতুন সম্পর্কে যেতে,অথচ অন্যদিকে ও আজও পারেনি অন্য কোনো মেয়েকে ভালবাসতে।তবু আজ সিদ্ধার্থর মনে একটা প্রশ্নই আসছে বারবার, "শ্রী... ওটাকি তোরও জীবনের সেরা রঙখেলা ছিল?"

Sunday 18 October 2015

রাজকাহিনী-দেশভাগ,লড়াই আরও অনেককিছু...

Rajkahini niye ekti lekha,review noy:)
18-10-2015
12:58

সিনেমা নিয়ে লেখার মত এসেনশিয়াল কোনো জ্ঞানই আমার নেই। তাও লিখি।কেন লিখি? কারন লিখলে হাতের আংগুল গুলো সচল থাকে আর মস্তিষ্কের ক্ষানিক ব্যায়াম হয়।আর লিখি কারণ কিছু সিনেমা দেখার পর মাথার পোকা গুলো কিলবিল করে ওঠে,পথ খোজে বেরিয়ে আসার।সেরকমই একটা সিনেমা দেখলাম।রাজকাহিনী।
-----------------------------------
সিনেমাটা দেখার পর সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে।কীভাবে সম্ভব? কীভাবে? কীভাবে এই জেন-ওয়াই,ডিজিটাল-ইন্ডিয়ার যুগে একটা আদ্যপ্রান্ত নাচা-গানা হীন,তত্ত্বের কচকচানি,আতলামির মাত্রাধিক্য মুক্ত,কিছু অশিক্ষিত মহিলার লড়াইয়ের ছবি কীভাবে আমাদের এতটা নাড়িয়ে দিতে পারে?কীভাবে কাদাতে পারে আমাদের?
 বাংলা সাহিত্যে লেখক-সাহিত্যিকের অভাব কোনোদিনও ছিলনা।নকশাল,সত্তরের দশক নিয়ে যথেষ্ট লেখা আছে।হাংগ্রি জেনারেশন নিয়ে তো নাটক-নভেল এখনো লেখা হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ,দেশভাগ নিয়ে এইবাংলায় আরও কাজ হওয়ার সু্যোগ ছিল বলেই মনে হয়।ঋত্বিক ঘটক,সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা করেছেন।কিন্তু তারপর? দেশভাগের মত একটা বৃহত্তর রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনা বরাবর নজর এড়িয়েই িয়েছে বাঙালী সাহিত্যিকদের।
ইতিহাস বাঙালীকে কী দিয়েছে কিছু মরচে-পড়া আভিজাত্য,আর বঞ্চনা এবং দেশভাগের অভিজ্ঞতা ছাড়া?সেই অভিজ্ঞতার নির্যাস থেকেই জন্ম নেয় এক-একটা রাজকাহিনী।
আমি দেশভাগ দেখিনি।দেশভাগের গল্প শুনেছি,পড়েছি।আজ সেই শোনা আর পড়া গুলোই ছবি হতে দেখলাম।হতে দেখলাম রাজকাহিনী।পিলপিল করে এগিয়ে যাওয়া উদ্বাস্তুদের স্রোতে মিশে আমিও পিছিয়ে গেলাম বর্তমান ছেড়ে ইতিহাসে।দেশভাগ তো পিছিয়ে যাওয়ারই কাহিনী।জন্মস্থান,ভিটে-মাটি কে পিছনে ফেলে দাঙ্গা আর মৃত্যুভয় কে সঙ্গে নিয়ে অচেনা দেশে,অনিশ্চিত আগামীর উদ্দেশ্যে এগিয়ে যাওয়া কী আদেও এগিয়ে যাওয়া?            
রাজকাহিনী লড়াইয়ের গল্প।দেশভাগের সময় রাডক্লিফ লাইনের উপর দাড়িয়ে থাকা একটা কোঠাবাড়ীর বেশ্যাদের সরকারি ফরমান ও দেশভাগের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর গল্প।    পরিনাম যা হওয়ার তাই হয়।জিতে যায় সরকারী ফরমান,'বেসরকারী' পন্থা নিয়ে।আর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় দেশভাগের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর প্রতিবাদ।কিন্তু সবসময়ই পরাজয় কী শুধুমাত্র পরাজিতের হয়?লড়াইয়ের শেষে আগুনের মধ্যে দাড়িয়ে বেগম জান-দুলি-লতাদের মুখগুলোর মধ্যে আপনি তার উত্তর পেয়ে যাবেন।   
জাত-ধর্ম-চরিত্রহীন মেয়ে গুলো জানে এই জীবন তাদের আর কিছুই দেবেনা। কিন্তু এই জীবনে তারা আর কিছু হারাতেও রাজী নয়।এই মেয়েগুলোর লড়াইয়ের জন্যই রাজকাহিনী এত সহজে ভোলার নয়।
দেশভাগ,ভিটে-মাটি ছেড়ে না যাওয়ার তীব্র আকুলতা ছাড়াও সৃজিত যত্ন নিয়ে তুলে ধরেছেন কোঠাবাড়ীর অন্দরমহল।তাদের জীবন-জীবিকার লড়াই,তাদের হাসি,আনন্দ,কান্না বারবার গল্পে ফিরে এসেছে।গল্পের শেষের তাদের ঐ সমবেত সংগ্রামের কাহিনীটিকে আরও নিপুণ ভাবে বলতে এটির প্রয়োজন ছিলই। তাই গল্প প্রথমদিকে একটু আসতে এগোয়।
সকলে যেন দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে অভিনয় করলেন।
ঋতুপর্না সেনগুপ্ত জীবনের শ্রেষ্ট অভিনয় করে গেলেন।কী সাবলীল ভাবে কী তীক্ষ্ণ অভিনয়!জীবন আর পেশা তাকে পাল্টে দিলেও তার সূক্ষ্ম নারীত্বে দাগ কাটতে পারেনি।সিনেমা যত এগিয়েছে তত ধার বেড়েছে তার অভিনয়ে।
প্রসেনজিত,চিরঞ্জিতের পর এবার ঋতুপর্না!
পরিচালক সৃজিত জানেন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে সেরাটা বের করে আনতে।তাইতো এই সিনেমায় নতুন করে পেলাম অভিনেতা কাঞ্চন মল্লিক এবং রুদ্রনীল ঘোষকে।কাঞ্চনকে এরকম রোলে ভাবতে কে পারত সৃজিত ছাড়া?
শাশ্বত-কৌশিক  -রজতাভ-আবীর-যীশু,সুদীপ্তা-রিধিমা-পার্ণো-সোহিনী-সায়নি বাপরে বাপ! এত নাম মনে রাখাও যে চাপ! যাইহোক,সবাই ছাপিয়ে অভিনয় করলেন।
যাকে ছাড়া পরিচালক এত ভাল গল্প,এত ভাল ভাবে বলতে পারতেননা তিনি হলেন অভীক মুখোপাধ্যায়।
১৯৪৬-৪৭,দেশভাগ,লড়াইগুলো তুলে ধরার জন্যে দৃশ্যায়ন নিয়ে যত্ন নেওয়ার যে দরকারটা ছিল তা তারা দুজন মিলে বেশ ভালই উতরেছেন।
শুরুতে মাণ্টো আর শেষে রবীন্দ্রনাথ এই ছবির দুই বড় সম্পদ।
তবে ছবির সবচেয়ে বড় সম্পদ এই ছবির গল্প।প্রথম দিকে ঢিমে-তালে এগিয়ে ছবি গতি তোলে মধ্যান্তরের আগে এসে। তারপর থেকে শেষ অবধি একেবারে 'Gaaye kNata-chokhe jol' কেস।
সেলিম-সুজনের মারা যাওয়ার সিন,যীশু-আবীর-সোহিনী-পার্ণো্র কিছু এক্সপ্রেশন,আর শেষের কুড়ি মিনিট ভয়াবহ রকমের সুন্দর!
সৃজিত মুখার্জি জানতেন সিনেমা দেখার পর সবার পা কাপবে।গলা বুজে আসবে।কেদে ফেলবে সবাই।তাই বোধহয় জাতীয় সঙ্গীতের শেষ চারটি স্তবক একদম শেষে ব্যবহার করে সবাইকে চার মিনিট দাড় করিয়ে রেখে তাদের কে বাস্তবে ফেরত যেতে সাহায্য করলেন!
সিনেমাটি দেখলে বেশ কিছুক্ষণ কাজ করতে পারবেননা।বাড়ী যাওয়ার বাসও মিস করতে পারেন।সবচেয়ে বড় কথা পুজোর মধ্যে কাদবেন? এবাবা!!
কিন্তু যদি এইসব কষ্ট সহ্য করতে রাজী থাকেন তাহলে এই পুজোয় আপনার কাছে একটা মনে রাখার মত গিফট হতে পারে রাজকাহিনী।
পুনশ্চঃ(কিছু নিজের কথা)
সৃজিত মুখার্জির বরাবরই একটা ভাল ফ্যানবেস থাকার পাশাপাশি একটা ভাল 'শত্রুপক্ষ' সবসময়েই ছিল।স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমি প্রথম দলের লোক।আগেই বলেছি সিনেমার জ্ঞান আমার নেই।ভাল লাগে যে ছবি তাকে ভাল বলি।যে ছবি আমার  হলের ভিতরে সামগ্রিক ভাবে ভাল লেগেছে,হল থেকে বেরিয়ে অন্যের মতামত শুনে সেই ছবির ভুল বের করতে আমি পারিনা এবং চাইওনা।
তার সব ছবির মত রাজকাহিনীরও খুত বের করা হবে।নিশ্চিত ভাবেই।আর তিনটে ন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড পেয়েও নিজেকে তাদের সামনে প্রমান করতে পারবেননা সৃজিত।
তবু বলব,বর্তমান বাংলার 'গল্প-বলিয়ে'দের মধ্যে সৃজিত অন্যতম সেরা নন।সৃজিতই সেরা!
ধন্যবাদ জানাবো না কারণ ছবি বানানো আপনার কাজ,তাই আপনি বানান। কিন্তু আপনার ছবির জন্যে অপেক্ষা আর দেখার পরের মুগ্ধতা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত। তাই প্রনাম আপনাকে।এগিয়ে চলুন,কমরেড... :)